Saturday, April 19, 2025

বিএনপির রাজনীতিতে আ. লীগ নেতারা সক্রিয়

আরও পড়ুন

কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং স্থানীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, মানুষের জায়গা দখল ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের জান-মালের উপরে হামলা এবং ভাঙচুর, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, এমনকি সাধারণ মানুষকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি এবং বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন খন্দকার নাসির।

অভিযোগে আরো বলা হয়, অর্থের বিনিময়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদের দোসর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিএনপির দলে অন্তর্ভুক্ত করছেন খন্দকার নাসিরুল। বিগত সময়ে হামলা মামলা সহ্য করা দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে বিভিন্ন ভাবে তাদের হুমকি-ধামকি এবং অপবাদ দিচ্ছেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের পদধারী একাধিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের বিএনপিতে যোগদানের করানো হয়েছে। খন্দকার নাসিরুল ইসলাম আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশে বসিয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করছেন। এতে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। অতীতেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে একাধিকবার দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

গত ৮ জানুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা) আসনের ৪০ জন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতার সাক্ষরিত লিখিত আবেদন করেন বোয়ালমারী উপজেলার ড. শাহাবুদ্দিন আহমেদ। খন্দকার নাসিরুলের বিরুদ্ধে একই অপরাধের অভিযোগে গত বছরের ২ নভেম্বর প্রথম দফা অভিযোগ করলেও বিএনপির কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম তার নিজ নির্বাচনীয় এলাকা ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা) আসনে প্রচার-প্রচারণা ও দলীয় সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করছেন।

আসনটির বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, নাসির স্থানীয় বিএনপির ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করে আওয়ামী লীগের সমর্থিত একাধিক চেয়ারম্যান ও পদধারী নেতাদেরকে বিএনপিতে যোগদান করিয়ে তার মাঠ গোছাচ্ছেন।

আরও পড়ুনঃ  অজ্ঞাতস্থান থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি-সেক্রেটারির বিবৃতি

একাধিক বিএনপির নেতা জানান, মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাকির মিয়া এবং আওয়ামী লীগ নেতা উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল হাসান টিপু গত ১৯ অক্টোবর মধুখালীর একটি নৌকা বাইচ অনুষ্ঠানে ফুল দিয়ে খন্দকার নাসিরুলের হাত ধরে বিএনপিতে যোগদান করেন। গত ৩০ অক্টোবর বোয়ালমারীতে খন্দকার নাসিরের জনসভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাওলা বিশ্বাস মঞ্চে ছিলেন। খন্দকার নাসিরের হাত ধরে বিএনপিতে যোগদান করেন আওয়ামী লীগ নেতা ও মেগচামী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাবির উদ্দিন শেখ এবং সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সোনা মিয়া। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী হিরু মুন্সি গত মাসে খন্দকার নাসিরের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন।

বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির নেতা সৈয়দ টুটুল খন্দকার নাসিরের বিরোধিতা করলে গত ১৬ আগস্ট তাকে কুপিয়ে জখম করে তার সন্ত্রাসী বাহিনী।

বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর গ্রামের বাসিন্দা খন্দকার নাসিরুল ইসলাম। এলাকাতে নাসির খন্দকার নামেই পরিচিত। তিনি বর্তমানে কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সভাপতি এবং ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তবে তিনি ৮০ দশকের শেষের দিকে জাতীয় পার্টির রাজনীতি দিয়ে তার রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয়। ৯৪ সালের শেষের দিকে তিনি জাতীয় পার্টি ছেড়ে দিয়ে জাসদে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি বিএনপিতে পথচলা শুরু করেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে হাতী মার্কায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ফরিদপুর ১ আসনের নির্বাচনে জয়লাভ করে জাতীয় সংসদের এমপি নির্বাচিত হন। যদিও সে সরকারের মেয়াদ ছিল ১৩ দিন।

জানা যায়, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক সাংবাদিকের বাড়ি ভাঙচুর ও জীবননাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর আগে ১৩ নভেম্বর বুধবার রাতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক খন্দকার আব্দুল্লাহ ওরফে তুষার বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম রসূল।

আরও পড়ুনঃ  কুয়েটে সংঘর্ষে জড়িতদের রাজনৈতিক পরিচয়ে ছাড় দেওয়া চলবে না:ইশরাক হোসেন

বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির নেতা সৈয়দ টুটুল বলেন, আমি বোয়ালমালী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামছুদ্দিন ঝুনু ভাইয়ের সমর্থনে বিএনপির রাজনীতিতে সাংগঠনিক কাজ করি। এজন্য খন্দকার নাছির তার আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে গত ১৬ আগস্ট আমাকে কুপিয়ে জখম করে।

তিনি আরো বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমি সক্রিয় ভূমিকা পালন করি। তখন খন্দকার নাসির ঢাকায় ছিলেন। স্থানীয় বিএনপির কারো সঙ্গে তার যোগাযোগ নাই। ৫ আগস্টের পর হঠাৎ করে তার এই আসনের রাজনীতিতে উদয় হয়।’

আলফাডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম খোসবু রহমান খোকন বলেন, ‘খন্দকার নাসির ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির দল করতে আসেনি। তিনি এসেছেন চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কাজ করে টাকা ইনকামের জন্য। তিনি বিএনপিতে আওয়ামী লীগের পদধারী লোকদের যোগদান করিয়ে তার সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করতে চাচ্ছেন। খন্দকার নাসিরের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তার ওপর হামলা হচ্ছে।’

মধুখালী উপজেলার বাসিন্দা এবং যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘৫ বছর আগে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে একবার বহিষ্কারও হন খন্দকার নাসির। কেন্দ্রীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করবো।’

মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাকির মিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী আব্দুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে স্বীকার করে বলেন, ‘তাদের সঙ্গে না চললে পেতাম না কোনো উন্নয়নের বরাদ্দ। তাই আমাকে বাধ্য হয়েই আওয়ামী লীগের সঙ্গে চলাফেরা করতে হতো।’

বোয়ালমারীর রুপাপাত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সোনা মিয়া বলেন, ‘গত সরকারের আমলে নিজের চেয়ারম্যানী পাওয়ার ব্যবহার করতে আব্দুর রহমানের সঙ্গে সখ্যতা গড়তে হয়েছে।’

আরও পড়ুনঃ  মন খারাপ হলেই বিল্লাল দখলে নিতেন অন্যের সম্পদ

সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের সঙ্গে সখ্যতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার এসকেভেটরের ব্যবসা আছে। সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের কিশোরগঞ্জের প্রেসিডেন্সি রিসোর্ট তৈরির সময় পুকুর কাটার জন্য আমার এসকেভেটর ভাড়া নেন। সেই সুবাদে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়।

এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগকারী অস্ট্রেলিয়া বিএনপির সহ-সভাপতি ড. শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সারাদেশ ফ্যাসিবাদের মুক্ত হলেও ফারিদপুর-১ এ ফ্যাসিবাদ বরং আরো শক্তিশালী হয়েছে খন্দকার নাসিরের হাত ধরে। নাসির অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী নেতাকর্মীদের বিএনপিতে পুনর্বাসন করে বিএনপিকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে চাঁদাবাজিসহ সরকারি বিলের মাছ দখল, অবৈধভাবে নদী থেকে বালু বিক্রি, জমি দখল, দোকান থেকে উচ্ছেদ, নির্যাতনসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৯ অক্টোবর নৌকা বাইচ অনুষ্ঠানে জাকির চেয়ারম্যান ও টিপু চেয়ারম্যান আমাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান, সেখানে বিএনপিতে যোগদান করার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারা শুধু শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এই আসনের কোনো উপজেলাতেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিএনপিতে যোগদান করার ঘটনা ঘটেনি।’

তিনি বলেন, ‘যারা এই অভিযোগ দিয়েছে তারা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার জনপ্রিয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এমন অভিযোগ দিয়েছে।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা বলেন, ‘দলীয় হাই কমান্ডের কঠোর নির্দেশনা যে- বিএনপির দলে আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো দলেরই কোনো কর্মী বা নেতাকে যোগদান করার সুযোগ নেই। এটি কেউ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে দল।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শুনেছি। স্থানীয় ভাবেও কিছু অভিযোগ শুনেছি। কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড দলের শৃঙ্খলা সম্পর্কে খুবই কঠোর। আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবো। তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলের পক্ষ থেকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।’

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ