আগামী জুলাই মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। আজ বুধবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এমন তথ্য জানান তিনি।
নির্বাচনের রোডম্যাপের বিষয়ে ইসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। অর্থাৎ প্রাক রোডম্যাপের কাজ শুরু করেছি। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে লিখিত রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।’
তফসিল ঘোষণার আগে পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি যেন তফসিল ঘোষণার আগেও যারা ১৮ বছর পূর্ণ করবেন, তারা যেন ভোট দিতে পারে। এ জন্য ভোটার নিবন্ধন আইনে সংশোধন আনার কথা ভাবা হচ্ছে। ডিসেম্বরে ৩১ তারিখের মধ্যে যাদের ১৮ হবে তারা যেন যুক্ত হতে পারে। চলমান ভোটার তালিকা হালানাগাদ কার্যক্রম গত এপ্রিল ১১ শেষ হয়েছে। তারপরও কিছু সেন্টার আমরা চালু রেখেছি। আগামী জুনের ভেতর ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হবে।’
সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সীমানা নির্ধারণের আইনটি আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করেছি। সংশোধন হয়ে না আসলে একটি ছাপার ভুলের জন্য আমাদের হুবহু ঠিক রেখে নির্বাচন করতে হবে। এই ছাপার ভুলটা সংশোধনের জন্য আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তবে এ নিয়ে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত পাইনি, পেলে সীমানা নির্ধারণের কাজটি শেষ করতে পারব। এ ক্ষেত্রে তিন মাস লাগবে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শেষ করতে।’
নতুন দলের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করেই সংলাপে বসার কথা জানিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আগেরবার ছয় মাসের মতো সময় লেগেছিল নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। আমরা যেহেতু সরকার ঘোষিত ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, এ ক্ষেত্রে আমাদের হাতে সময় কম। তাই তিন মাসের মধ্যে কার্যক্রম সম্পন্ন করার কথা ভাবছি। তবে এটা তাড়াহুড়ো নয়। আমরা বেশি কাজ করে বিষয়টি সম্পন্ন করব। আগামী আগস্ট–সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করব। তবে আমরা এটিকে সংলাপ বলছি না। মতবিনিময় করব। এ ক্ষেত্রে নতুন দলগুলোর নিবন্ধন কার্যক্রম যদি সম্পন্ন না হয়, তবে তারা তো সংলাপে অংশ নিতে পারবে না। আমরা চাই নতুন দল যারা নিবন্ধন পাবে তাদের নিয়েই সংলাপের আয়োজন করতে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তিনটি নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন। তবে তারা সময় বাড়ানোর জন্য বলেছে। আমরা এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধন পেতে আগ্রহী দলগুলোর আবেদন নেওয়া হবে। সময় বাড়ানোর এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো আবেদন করেনি। তারা সাক্ষাতের কোনো সময় চেয়েছে কিনা জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘না, তারা এখনো কোনো সময় চায়নি।’
বিএনপি ‘সন্তুষ্ট’ নয়, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুলবিএনপি ‘সন্তুষ্ট’ নয়, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল
বর্তমান যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অনেক পুলিশ এখনো কাজে যোগ দেয়নি বলা হচ্ছে, এই অবস্থায় সরকার ঘোষিত সময়ের মধ্যে কমিশন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন জেলা পরিদর্শন করেছি ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে পুলিশ সুপার, নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা তো এক কথায় বলেছে যে রমজান মাসে আমাদের যে পারফরম্যান্স এটি আমরা আরও ইমপ্রুভমেন্ট করার চেষ্টা করছি। এটি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আমরা নির্বাচন করতে কোনো বাধা মনে করি না। বাস্তবেও আমরা রমজান মাসে যে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বা অতীতের তুলনায় একটা তুলনামূলক পর্যালোচনা করি, তাহলে আমি মনে করি ধারাবাহিকভাবে তা ইম্প্রুভ হচ্ছে। ছয়-আট মাস সময় আমরা যদি হাতে পাই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও ভালো হবে বলে আমরা মনে করি। তারপরও আমরা ওদের সঙ্গে বসব, বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে থেকে আমরা তথ্য নেব।’
চিহ্নিত অনেক সন্ত্রাসী জামিনে বাইরে আছে, নির্বাচনের আগে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন করার লক্ষ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রশ্নে যা যা পদক্ষেপ নেওয়ার সবই নেব।’
নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আচরণবিধি, নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালা এবং বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা সংশোধনের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছি। কমিশনের অনুমোদন পেলে অচিরেই আমরা এগুলো মুদ্রণে দেব।’