ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রকাশিত ফলের সঙ্গে হলভিত্তিক ১৮ প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটে গরমিল দেখা দিয়েছে। রবিবার ওই ১৮ জনের প্রাপ্ত ভোট যোগ করে দেখা গেছে, প্রকাশিত ফলে নয়জনের ভোট বেশি এবং নয়জনের কম। তবে এটিকে মুদ্রণজনিত ভুল বা টাইপিং মিসটেক হিসেবে উল্লেখ করেছেন চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক জসীম উদ্দিন।
যাদের ভোট কম উল্লেখ রয়েছে
ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে বিজয়ী আসিফ আব্দুল্লাহর প্রাপ্ত ভোট ৯১০১ হলেও কেন্দ্রীয়ভাবে প্রকাশিত ফলে ৯০৬১ উল্লেখ রয়েছে, যেখানে ৪০ ভোট কম।
একই পদে মো. আসিফ জারদারীর প্রাপ্ত ভোট ২০৫০ হলেও কেন্দ্রীয় ফলে ২০০০ উল্লেখ রয়েছে। ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে নির্বাচিত মাজহারুল ইসলামেরও ৫০০ ভোট কম উল্লেখ রয়েছে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রকাশিত ফলে। তার প্রাপ্ত ভোট ৯৮৪৪ হলেও প্রকাশিত ফলে উল্লেখ রয়েছে ৯৩৪৪।
ক্রীড়া সম্পাদক পদে ছাত্রদল প্যানেলের চিম চিম্যা চাকমার প্রাপ্ত ভোট ৩৮৮৮ হলেও প্রকাশিত ফলে উল্লেখ রয়েছে ৩৭৮৮, অর্থাৎ ১০০ ভোট কম।
সদস্য পদে সর্বমিত্র চাকমার প্রাপ্ত ভোট ৯৫৪৮ হলেও প্রকাশিত ফলে উল্লেখ রয়েছে ৮৯৮৮, অর্থাৎ ৫৬০ ভোট কম। সদস্য পদে আবিদ আব্দুল্লাহর প্রাপ্ত ভোট ২৪২৩ হলেও কেন্দ্রীয় ফলে উল্লেখ রয়েছে ২৩৮৩, অর্থাৎ ৪০ কম। একইভাবে সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে মো. লানজু খানের প্রাপ্ত ভোট ১৫৭১ হলেও প্রকাশিত ফলে উল্লেখ রয়েছে ১৫৩১। এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ সাকিবের প্রাপ্ত ভোট ৩৯৬২ এবং প্রকাশিত ফলে উল্লেখ রয়েছে ৩৯২২।
একই পদে আতাউর রহমান অপু ৫৯৮ ভোট পেলেও কেন্দ্রীয় ফলে উল্লেখ রয়েছে ৫৯৫ ভোট, অর্থাৎ ৩ ভোট কম।
যাদের ভোট বেশি উল্লেখ রয়েছে
সহসভাপতি পদে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের প্রাপ্ত ভোট ৬ হলেও প্রকাশিত ফলে উল্লেখ রয়েছে ৮ ভোট। সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে আশরেফা খাতুনের প্রাপ্ত ভোট ৮৯০ হলেও কেন্দ্রীয় ফলে উল্লেখ রয়েছে ৯০০। সমাজসেবা সম্পাদক পদে তাওহিদুল ইসলামের প্রাপ্ত ভোট ২০৪৪ হলেও প্রকাশিত ফলে উল্লেখ রয়েছে ২০৪৫। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ফাতিন ইশরাক পেয়েছেন ২০১১ ভোট।
তবে প্রকাশিত ফলে তার প্রাপ্ত ভোট উল্লেখ রয়েছে ২০২১, অর্থাৎ ১০ ভোট বেশি। একই পদে ফারহান লাবিব পেয়েছেন ৪৮৬ ভোট। আর প্রকাশিত ফলে তার প্রাপ্ত ভোট উল্লেখ রয়েছে ৫২৬, অর্থাৎ ৪০ ভোট বেশি।
ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে মাহাথির খান নিনাদ ও মো. রায়হানের প্রাপ্ত ভোট যথাক্রমে ৬৯৪ ও ৩০৫ হলেও প্রকাশিত ফলে উল্লেখ রয়েছে ৭০৪ ও ৩১৫। দুজনেরই ১০ ভোট করে বেশি। সদস্য পদে আবির হাসান পেয়েছেন ৩২২৬ ভোট। আর কেন্দ্রীয়ভাবে প্রকাশিত ফলে উল্লেখ রয়েছে ৩৩২৬ ভোট। মনির হোসেন ৫৪৬ ভোট পেলেও প্রকাশিত ফলে লেখা রয়েছে ৫৮২ ভোট।
এ নিয়ে ফেসবুক পোস্টে ক্ষোভ জানিয়ে মো. লানজু খান লিখেছেন, ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলে আমার ভোট ১৫৩১টি হলেও প্রতিটি হলের ভোট গণনা করে আমার ভোট এসেছে ১৫৭১টি। ধন্যবাদ ঢাবি প্রশাসনকে। আপনাদের চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি।
অপরদিকে সাকিব ফেসবুকে লিখেছেন, শিক্ষার্থীদের রায়কে সম্মান জানিয়ে যে কয়জন নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে আমি তাদের মধ্যে অন্যতম। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যর্থতাকে আমি দালিলিক প্রমাণ হিসেবে রাখলাম।
গরমিলের বিষয়ে জানতে চাইলে চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেটা যোগ করে পেয়েছে সেটাই সঠিক। এজন্যই তাদের কাছে লিস্ট দেওয়া হয়েছে। ভোররাত পর্যন্ত গণনার পর সবাই ক্লান্ত ছিলেন। তখন সবারই ঘুম ঘুম ভাব ছিল, যার ফলে অনেকে পাঁচের জায়গা চার লিখেছেন। এগুলো টাইপোলজিক্যাল মিসটেক। তবে এটা সংশোধন করে দেওয়া হবে। হলের ফলাফলে কোনো ভুল নেই।’
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পরদিন সকালে কেন্দ্রীয়ভাবে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এতে সহ-সভাপতি পদে সাদিক কায়েম, সাধারণ সম্পাদক পদে এস এম ফরহাদ, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মহিউদ্দীন খানসহ ২৬ পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হন।