Sunday, April 20, 2025

ইবি ছাত্রদলকে বসার স্থান নির্মাণে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দিল প্রশাসন, সমালোচনা

আরও পড়ুন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বসার স্থান (দলীয় টেন্ট) বানাচ্ছে শাখা ছাত্রদল। ক্যাম্পাসের ঝালচত্বরে বেশ কয়েকটি বড় গাছের মোটা শেকড় কেটে টেন্টটি তৈরির কাজ চলছে। তবে এ টেন্ট বানাতে শাখা ছাত্রদলকে শিক্ষার্থীদের ফান্ড থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিস ও কোষাধ্যক্ষ দপ্তরের একাধিক সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।

প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বসার জন্য আমবাগানে টেন্ট বানাতে প্রকৌশল অফিসে একটি আবেদনপত্র দেওয়া হয়েছিলো। আবেদনটিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদের স্বাক্ষর দেয়া হয়। পরে ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রকৌশল অফিস নোট দিলে প্রশাসন তা অনুমোদন করে শিক্ষার্থীদের ফান্ড থেকে এই অর্থ বরাদ্দ দেয়।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের টাকায় দলীয় টেন্ট তৈরির বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। তাদের কাছে বিষয়টি প্রয়োজনীয় কাজগুলোকে উপেক্ষা করে তেলা মাথায় তেল দেওয়া মতো। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো টেন্ট রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই অপরিষ্কার অবস্থায় থাকায় শিক্ষার্থীরা সেগুলোতে বসে না। ওইসব টেন্ট নিয়মিত পরিস্কার রাখলে শিক্ষার্থীদের বসার জন্য পর্যাপ্ত হবে বলে মনে করছেন তারা। শিক্ষার্থীরা হলে পর্যাপ্ত ভর্তুকি পায় না। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় পানির প্লান্টগুলো দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে। এসব দিকে প্রশাসনের কোনো নজর নেই। প্রকৌশল অফিস থেকে সেগুলো মেরামতের জন্য নোট দেওয়া হলেও আর্থিক অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এখনও ফাইলটি প্রশাসন ভবনে আটকে আছে। অথচ তারা অহেতুক কাজের জন্য জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে। সেটাও আবার সাধারন শিক্ষার্থীদের ফান্ড থেকে।

আরও পড়ুনঃ  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শনিবার বন্ধ থাকবে কিনা, যা জানা গেল

লোকপ্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের আড্ডা দেওয়ার যথেষ্ট জায়গা আছে। নতুন করে টেন্ড বানানোর কোন প্রয়োজনীয়তা আমি দেখি না। আর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানার ব্যবহার করাটা ভালোভাবে দেখছি না৷ দেশে সবারই রাজনীতি করার অধিকার আছে, কেও রাজনীতি করতে চাইলে তার নিজের রাজনৈতিক দলের ব্যানারে রাজনীতি করাই ভালো।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রমৈত্রী সহ সব ছাত্রসংগঠনেরই টেন্ট আছে শুধু ছাত্রদলের কোন টেন্ট নেই। আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন দিয়েছিলাম, প্রশাসন সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে বরাদ্দ দিয়েছে। এমন না যে প্রশাসনের ছাত্রদলের নামে বা আমার নামে টাকা দিয়ে দিয়েছে। এটা ছাত্রদলের টেন্ট হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সাধারণ শিক্ষার্থীর জন্য উন্মুক্ত। তারা যেকোনো সময় এসে বসবে, গল্পগুজব করবে। আমরা সাংগঠনিকভাবে একটি টেন্টের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছি এবং আবেদন দিয়েছি। প্রশাসন যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে কাজ শুরু করেছে।

আরও পড়ুনঃ  আদালত প্রাঙ্গণে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, যুবককে গণপিটুনি

প্রকৌশল অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ.কে.এম. শরীফ উদ্দীন বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের বসার জন্য আমবাগানে টেন্ট বানাতে একটি আবেদন এসেছিল। আবেদনপত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ছাত্রদলের আহ্বায়কের সিগনেচার দেয়া হয়েছে। পরে ক্যাম্পাসের আমবাগানে টেন্ট বানাতে এই বরাদ্দ হয়েছে।’

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ভিসি অফিস থেকে এটির অনুমোদন হয়ে টেন্ডার হওয়া পর্যন্ত সকল বিষয় কমপ্লিট ছিল। পরে আমি শুধু বরাদ্দকৃত অর্থটা ছাড় দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের জন্য যে ফান্ড রয়েছে সেখান থেকে অর্থটা দেয়া হয়েছে। তবে কারা আবেদন করেছিলো, কি আবেদন করেছিলো তা আমি বলতে পারবো না। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য স্যাররা বিষয়টা ভালো জানেন।

আরও পড়ুনঃ  শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, কাদের ও কামালসহ আসামি অনেকে

এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আর্থিক বিষয়গুলোর সাথে আমি সংশ্লিষ্ট নই।

প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ), ছাত্রশিবির, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়নসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের দলীয় টেন্ট রয়েছে। সবগুলো সংগঠনের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি হয়েছে বলে জানা যায়।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ