চীনের এক তরুণী বাসা ভাড়ার চড়া খরচের কারণে বাধ্য হয়ে অফিসের টয়লেটে বসবাস করছেন। মাত্র ৫০ ইউয়ান (প্রায় ৭ মার্কিন ডলার) ভাড়ায় তিনি ৬ বর্গমিটারের এই অস্বাস্থ্যকর স্থানে দিন কাটাচ্ছেন। হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই মানবিক কাহিনি।
ইয়াং নামের ওই তরুণী চীনের দক্ষিণাঞ্চলের হুবেই প্রদেশের একটি গ্রামীণ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জিয়াওশিয়াং মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, তিনি হুনান প্রদেশের ঝুজৌ শহরের একটি আসবাবপত্রের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন। তার মাসিক বেতন মাত্র ২,৭০০ ইউয়ান (প্রায় ৩৭০ মার্কিন ডলার), যেখানে শহরের গড় বেতন ৭,৫০০ ইউয়ান (প্রায় ১,০০০ মার্কিন ডলার)।
শহরটিতে বাসা ভাড়ার গড় হার ৮০০ থেকে ১,৮০০ ইউয়ানের মধ্যে, যা ইয়াংয়ের মতো একজন নিম্ন আয়ের কর্মীর জন্য অনেক বেশি। এই পরিস্থিতিতে, তিনি তার নারী বসের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন, যার আওতায় মাসে মাত্র ৫০ ইউয়ানের বিনিময়ে অফিসের টয়লেটে থাকার অনুমতি পান।
ছোট্ট ওই টয়লেটে দুটি লো-কমোড ও একটি সিঙ্ক রয়েছে। এসবের বাইরে যে সামান্য জায়গা বাকি থাকে, সেখানেই তিনি একটি ভাঁজ করা খাট, ছোট রান্নার পাত্র, পর্দা ও কাপড়ের হ্যাঙ্গার স্থাপন করে এক মাস ধরে বসবাস করছেন। দিনের বেলা কর্মীরা টয়লেট ব্যবহার করলেও, রাতে তিনি সেখানে নুডলস রান্না করেন ও ঘুমান।
ইয়াং জানান, নিয়মিত পরিষ্কার করায় টয়লেটটি দুর্গন্ধমুক্ত থাকে এবং অফিসে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় তিনি নিজেকে সুরক্ষিত মনে করেন। এমনকি দরজা খোলা রেখেও তিনি নিশ্চিন্ত থাকেন এবং কখনো তার কোনো জিনিস চুরি যায়নি।
অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করেও, তার বাবা-মা প্রায়ই ভাইয়ের শিক্ষার খরচ চালানোর জন্য তার বেতনের টাকা চেয়ে নিতেন। ইয়াং জানান, তার মাসিক খরচ ৩০০ থেকে ৪০০ ইউয়ান, আর বাকি টাকা তিনি একটি বাড়ি ও গাড়ি কেনার জন্য জমাচ্ছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই ইয়াংয়ের সংগ্রামী মানসিকতা ও পরিশ্রমের প্রশংসা করেছেন। একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এত পরিশ্রমী একটি মেয়ে যা-ই করবে, তাতেই সফল হবে।’ তবে, অনেকে তার অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন লিখেছেন, ‘গরম বাড়লে টয়লেট আরও স্যাঁতসেঁতে হয়ে উঠবে, যা তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।’ আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘আমি আশা করি, চীনের সব পরিবার তাদের ছেলে-মেয়েদের সমান চোখে দেখবে।’