কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েলে বড় পরিসরে হামলা শুরু হবে—এমন খবর প্রচারের কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে ইরান। নতুন করে শুরু এ হামলায় ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ড্রোনও ব্যবহার করছে তেহরান। এই হাইব্রিড আক্রমণ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে ইসরায়েলের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুঁটছেন ইসরায়েলিরা।
রোববার (১৫ জুন) মধ্যরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, তেল আবিব থেকে সরাসরি ফুটেজে ইসরায়েলি শহরের উপর কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র এবং ইন্টারসেপ্টর দেখেছে তাদের প্রতিবেদক। ইরানের এই আক্রমণ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জরুরিভাবে সুরক্ষিত স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে ইসরায়েলিরা।
ইরান থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফও। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিখেছে, ইরান থেকে প্রজেক্টাইল ফায়ারের কারণে উত্তর ইসরায়েলে আশ্রয় নিতে দৌড়াচ্ছে লাখ লাখ ইসরায়েলি।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১৩ প্রাথমিক প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো উত্তর উপকূলীয় শহর হাইফা এবং পার্শ্ববর্তী শহর তামরায় আঘাত হেনেছে। টাইমস অব ইসরায়েল বলছে, ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে, আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে ইসরায়েলিদের।
এর কয়েক ঘণ্টা আগেও ইরানে হামলা অব্যাহত রেখেছিল ইসরায়েল। আল জাজিরা বলছে, হাইফাতে আজ ইরান হামলা চালাবে, তা অনেকটাই অনুমেয় ছিল। কারণ সেখানে রয়েছে ইসরায়েলের প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র। ইরান মূলত তাদের গ্যাসক্ষেত্রে চালানো ইসরায়েলের হামলার জবাব দিতেই হাইফাতে এ হামলা চালিয়েছে।
ইরানের চৌকস ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড (আইআরজিসি) জানিয়েছে, ইসরায়েলে নতুন এ হামলাটি চালিয়েছে তাদের এরোস্পেস ফোর্স। বিপুল সংখ্যক ড্রোন ও মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে এতে। তারা বলেছে, ইসরায়েল নতুন করে ইরানে যেসব হামলা চালিয়েছে সেগুলোর জবাব দিতে এবং অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩ এর অংশ হিসেবে মিসাইল ও ড্রোন ছোড়া হয়েছে।
মূলত, শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইরানের বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ বর ধরনের হামলা করে বসে ইসরায়েল। এরপর সারাদিনই দেশটিতে হামলা অব্যাহত রাখে তারা। ভয়াবহ এ হামলায় ইরানের সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, সামরিক বাহিনীর এলিট শাখা ইসলামিক রেভোল্যুশনারী গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) প্রধান জেনারেল হোসাইন সালামিসহ অন্তত ২০ জন জ্যেষ্ঠ কমান্ডারকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ অবস্থায় ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই বাহিনীটির নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা করেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
দায়িত্ব নিয়েই ইসরায়েলের উদ্দেশে কঠিন হুঁশিয়ারি দেন নতুন আইআরজিসি প্রধান। তিনি বলেন, ইসরায়েলি হামলার জবাবে শিশু হত্যাকারী জায়নবাদী শাসকের জন্য শিগগিরই জাহান্নামের দরজা খুলে যাবে।
নতুন আইআরজিসি প্রধানের এ বার্তার কয়েক ঘণ্টা না যেতেই ইসরায়েলে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ নামে এ অভিযান শুরু করে ইরান। ক্রমেই ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে দুইদেশের এ সংঘাত।