Saturday, April 19, 2025

১৬ তারিখের অপেক্ষা, আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি

আরও পড়ুন

৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ৮ অগাস্ট দায়িত্ব নেয় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে বিএনপি। তবে দলটি শুরু থেকেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের একেক সময়ে, একেক জনের বক্তব্যে একেক ধরণের সময়সীমা ঘোষণায় সন্দেহ-সংশয় তৈরি হয়েছে দলটির নেতাদের মধ্যে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, বড় ধরণের সংস্কার করতে হলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে হতে পারে। আর ছোট আকারের সংস্কার হলে নির্বাচন হতে পারে ডিসেম্বরে। কিন্তু বিএনপি নির্বাচন চায় ডিসেম্বরের মধ্যেই। ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন আয়োজনের বিরোধী বিএনপি। এসব প্রেক্ষাপটেই বিএনপি বলছে, ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন নেয়ার চেষ্টা হলে তারা বিরোধিতা করবে, প্রয়োজনে রাজপথে কর্মসূচি পালন করবে। তবে তার আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত করে তাঁর কাছে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানাবে বিএনপি। এ বিষয়ে তার মনোভাব বোঝার পর কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দলটি।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির যে বৈঠক হওয়া কথা রয়েছে সেই বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ দেওয়ার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করবেন তারা। যদি ডিসেম্বরকে ঘিরেই নির্বাচনের কথা বলা হয়, তাহলে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে যাবে দলটি। আর যদি নেতিবাচক মনোভাব মনে হয় তাহলে ১৭ এপ্রিল থেকেই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে। এ বিষয়ে হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, প্রতিটি শহর ও জেলায় সমাবেশসহ অন্যান্য কর্মসূচি আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন তারা। তবে সবকিছু চূড়ান্ত হবে ১৬ এপ্রিলের বৈঠকের পর।

আরও পড়ুনঃ  আওয়ামী লীগকে জামায়াতের সাধারণ ক্ষমা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচন কবে হবে সেটা জানতে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সেই সাক্ষাতে কী ফল আসে তার ভিত্তিতেই করণীয় নির্ধারণ করা হবে। সবকিছু বিবেচনা করলে দেখা যায় নির্বাচন নিয়ে একটা অনিশ্চিত পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। সেটা গণতন্ত্রের জন্য কল্যাণকর নয়। কারণ নির্বাচন যতো দেরি হবে, গণতন্ত্র উত্তরণের রাস্তা ততো কঠিন হবে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা করছি। তাই এই সরকারকে কোনভাবেই বেকায়দায় ফেলতে চাই না। আমাদের লক্ষ্য নির্বাচন আদায় করা। সেটি নিশ্চিত হলে সরকারের সঙ্গে কোন ধরণের ঝামেলায় যাবো না। কিন্তু এর বিপরীত বিষয় হলে আমাদের অবস্থানও বিপরীত হতে পারে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দীর্ঘমেয়াদে রাখতে দু’একটি দল কাজ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দু’একটি দল চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দীর্ঘদিন থাকুক। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব কি চান? উনি দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে চান কিনা? কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে আমরা সেই মনোভাবটা বুঝতে চাই।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে আন্দোলন-সংগ্রামে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে জনপ্রিয়তায় স্মরণকালের শীর্ষে অবস্থান করছে বিএনপি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরাতে উন্মুখ দলটি। এ লক্ষ্যে সারাদেশে নিজ নিজ এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে ছুটে বেড়াচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশিরা। তবে ঠিক কবে নাগাদ নির্বাচন হবে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত সুনিশ্চিত কোন রোডম্যাপ আসেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে। যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলছে, নির্বাচন হবে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে। আবার জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশ কয়েকটি দল সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করছে। তবে ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় বিএনপি। ঈদের আগেই দলটির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আদায়ে রাজপথের কর্মসূচি দেবে তারা। এখন দলটি সেই পথেই এগুচ্ছে বলে একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুনঃ  আত্মস্বীকৃত রাজাকারদের জবাব দেবে ছাত্রলীগ: কাদের

ইতোমধ্যেই দলের নেতারা একাধিক বৈঠক করেছেন। গত সোমবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরপর বিএনপি জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত করে তারা ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রোডম্যাপ দেওয়ার আহ্বান জানাবেন। সে লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চাওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা আগামী ১৬ এপ্রিল বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের সময় দিয়েছেন। সেখানে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনী রোডম্যাপ চাওয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টা জবাবে কী বলেন তার ওপর ভিত্তি করেই বিএনপি ঠিক করবে নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে তারা সরকারের ওপর কীভাবে চাপ তৈরি করবে, কর্মসূচি কী হবে।

স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা জানান, দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) যদি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখান তাহলে দল নির্বাচনমুখী হবে। আর যদি নেতিবাচক মনোভাব দেখা যায় তাহলে ১৭ এপ্রিল থেকে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার। বিএনপি সূত্রে আরো জানা যায়, প্রাথমিকভাবে বিএনপি প্রতিটি জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বড় সংস্কার আর ছোট সংস্কার বলতে কী বোঝান, সেটা তো আমরা বুঝি না! কোন সংস্কারই ছোট বা বড় নয়। আমরা বলেছিলাম, নির্বাচনমুখী যেসকল সংস্কার সেগুলো শেষ করে নির্বাচন দিয়ে দিন। কিন্তু এখন বড় সংস্কার বলতে উনি কী বোঝাচ্ছেন, সেটা পরিস্কার করতে হবে। যদি উনি সংবিধান সংস্কারকে বড় সংস্কার মনে করেন তাহলে সেটা আমাদেরকে বলতে হবে। সংবিধথান সংস্কার তো জাতীয় সংসদ ছাড়া হবে না।

আরও পড়ুনঃ  যে বার্তা দিলেন খালেদা জিয়া

তিনি বলেন, সংস্কারের জন্য সময়ক্ষেপন করার কোনও যৌক্তিকতা নেই। কারণ সংবিধান সংস্কার ছাড়া এর বাইরে এমন আর কোনও সংস্কার প্রস্তাব নেই যেটা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহিত হলে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগবে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, এখানে সংবিধান সংশোধনীর যেসব বিষয়ে জাতীয় একমত্য তৈরি হবে সেসব বিষয় চিহ্নিত করে একটা চার্টার করাই যায়। পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ সেটা বাস্তবায়ন করবে। এরজন্য নির্বাচন পেছানোর তো দরকার নেই। এগুলো নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য একটা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হবে কিন্তু সেজন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা দিতে বাধা কোথায়?
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৬ তারিখের বৈঠকে কি হয় সেটি আগে দেখি, তার আগে কর্মসূচি নিয়ে কোন মতামত দিতে চাই না। কারণ আন্দোলন-কর্মসূচি এগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এগুলো অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। আমরা আপাতত ১৬ তারিখের বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাই।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ সভায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত ও কর্মসূচি উভয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে কর্মসূচির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনকিছুই বলা যাচ্ছে না। ১৭ এপ্রিল থেকে কর্মসূচিতে যাবে কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, মহাসচিব এখন দেশের বাইরে আছেন, তিনি ফিরে আসলেই কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ