বাংলাদেশ থেকে সদ্য বিদায় নেওয়া সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের একটি অনানুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে মডেল ও অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত তাঁকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়েছেন। তিনি এখন গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
মেঘনা আলমের ঘটনায় সামির নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি মেঘনা আলমের সহযোগী ছিলেন। ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক গতকাল সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) অবশ্য গতকাল শুক্রবার এক বার্তায় দাবি করে, তাঁকে ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’ নেওয়া হয়েছে। মেঘনা আলমকে অপহরণ করা হয়েছে, এমন কথা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বৃহস্পতিবার থেকে ছড়িয়ে পড়ার পর ডিএমপি গতকাল ফেসবুকে বার্তাটি দেয়।
ডিএমপি বলছে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে মিথ্যাচার ছড়ানোর মাধ্যমে আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের অবনতির অপচেষ্টা এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে মেঘনা আলমকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে।
মেঘনা আলমকে অপহরণের অভিযোগ সঠিক নয়, এমন দাবি করে ডিএমপি বলছে, আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার তাঁর রয়েছে।
মেঘনা আলম ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত মিস আর্থ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। তিনি মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান।
সৌদি ও বাংলাদেশ সরকারের কয়েকটি সূত্র আজকের পত্রিকা’কে বলেছে, রাষ্ট্রদূত ঈসা বাংলাদেশে তাঁর দায়িত্বের মেয়াদ প্রায় শেষ করে চলতি এপ্রিলে ঢাকা ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরই একপর্যায়ে সম্প্রতি তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানান, একজন নারী ‘আর্থিক সুবিধা নেওয়ার জন্য’ তাঁর সঙ্গে প্রতারণার চেষ্টা করছেন। তাঁকে বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছেন। রাষ্ট্রদূতের অভিযোগটি আমলে নিয়ে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মেঘনা আলমের যোগাযোগ থাকার বিষয়টি জানতে পারে। পুলিশ মেঘনা আলমের পরিবারের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করে। তবে এ উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
মেঘনা আলমকে আটক ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ স্টাইলে নাগরিক অধিকার হরণ: রাষ্ট্রচিন্তামেঘনা আলমকে আটক ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ স্টাইলে নাগরিক অধিকার হরণ: রাষ্ট্রচিন্তা
একপর্যায়ে মেঘনা এক ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, কয়েকজন লোককে রাষ্ট্রদূত ঈসা পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়েছেন। তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়, সরকার রাষ্ট্রদূতের পক্ষে থাকবে। তিনি যেন রাষ্ট্রদূতকে জড়িয়ে ফেসবুকে কিছু পোস্ট না করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সৌদি রাষ্ট্রদূত গত বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন।