দক্ষিণ পাকিস্তানের করাচি শহরের একটি জেল থেকে সোমবার (৩ জুন) গভীর রাতে দুইশোর বেশি কয়েদি পালিয়ে যায়। একাধিক ভূমিকম্পের কারণে আতঙ্ক ছড়ালে কয়েদিদের বাইরে বের হতে দেওয়া হয় এবং এরপর তারা জেল রক্ষীদের ওপর চড়াও হয়ে পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা ও পুলিশ। খবর রয়র্টাস।
পাকিস্তানের করাচি শহরের একটি জেল থেকে গভীর রাতে দুইশোর বেশি কয়েদি পালিয়ে যায়
প্রাদেশিক আইনমন্ত্রী জিয়া-উল-হাসান লাঞ্জার জানান, সোমবার মধ্যরাতের দিকে ওই জেলখানায় কয়েদিদের উঠানে বের হতে দেওয়া হয়। এর পরই শুরু হয় পালানোর ঘটনা, যা মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত চলে।
পুলিশ জানিয়েছে, কয়েদিরা জেল কর্মীদের কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে গেট ভেঙে পালায়। এ সময় গোলাগুলি হয়, যাতে একজন কয়েদি নিহত এবং তিনজন রক্ষী আহত হন। প্রাদেশিক পুলিশ প্রধান গুলাম নবী মেমন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
একজন প্রাইভেট নিরাপত্তা রক্ষী বুকশ রয়টার্সকে বলেন, আমি অনেকক্ষণ ধরে গুলির শব্দ শুনছিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি কয়েদিরা চারদিকে দৌড়াতে শুরু করে।
তিনি জানান, কয়েকজন কয়েদি আশেপাশের অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে ঢুকে পড়ে, পরে পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।
রয়টার্সের একজন প্রতিবেদক মঙ্গলবার জেলখানা পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন, কাঁচ ভাঙা ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েদিদের পরিবার-সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার ঘরও লণ্ডভণ্ড ছিল। জেলের বাইরে উদ্বিগ্ন স্বজনরা জড়ো হয়েছিলেন।
এই পালানোর ঘটনাকে পাকিস্তানের ইতিহাসের অন্যতম বড় জেল ভেঙে পালানোর ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন লাঞ্জার। করাচির মালির জেলখানাটিতে প্রায় ৬,০০০ কয়েদি ছিল।
স্থানীয় টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, কয়েদিরা রাতভর এলাকা জুড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, অনেকে খালি পায়ে।
প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ জানান, পালিয়ে যাওয়া কয়েদিদের মধ্যে প্রায় ৮০ জনকে ইতিমধ্যে ধরেছে পুলিশ।
জেল সুপারিনটেনডেন্ট আর্শাদ শাহ জানান, রাতে ২৮ জন রক্ষী দায়িত্বে ছিলেন এবং এত বড় সংখ্যক কয়েদির মধ্যে কেবল অল্প কয়েকজনই পালিয়েছে। তিনি বলেন, জেলখানায় সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না।
ওই কর্মকর্তারা বলেন, ভূমিকম্পের কারণে অনেক কয়েদি, যাদের মধ্যে অনেকেই হেরোইন ব্যবহারকারী, আতঙ্কে ছিলেন। ভূমিকম্পের কম্পনের কারণেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কয়েদিদের সেল থেকে বের হতে দেওয়াটা ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত। যারা এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছে, তাদের আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, যারা ছোটখাটো অপরাধে বন্দি ছিল, তারা এখন বড় অপরাধ—সন্ত্রাসবাদ—এর মামলায় পড়বে।