কুমিল্লায় পুলিশের অভিযানে ইয়াবাসহ আটকের পর শেখ জুয়েল নামে এক বিএনপি কর্মীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাতে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুয়েলের মৃত্যু হয়।
পেশায় ইন্টারনেট ব্যবসায়ী শেখ জুয়েল (৪৫) মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা গ্রামের শেখ বাড়ির মৃত শেখ গোলাম সারোয়ারের ছেলে। পরিবারে দাবি- জুয়েলের মৃত্যু পুলিশের নির্যাতনে হয়েছে। এ বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়ে পড়েছে। তবে পুলিশ নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাতে থানার সামনে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় লোকজন।
পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঙ্গরাবাজার ব্রিক ফিল্ড এর পূর্বপাশে জনৈক হেলালের বাড়ি থেকে ৭০ পিস ইয়াবাসহ জুয়েল ও তার ৪ সহযোগীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রাতে হাজতে জুয়েল অসুস্থ হয়ে পড়লে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
জুয়েলের স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আমার স্বামী ইন্টারনেটের বিল কালেকশন করতে যায়। দুপুরের পর পরই খবর পাই যে- আমার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। পরে থানায় গিয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। অনেক অনুরোধ করে তার সঙ্গে দেখা করি। সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় আমার স্বামী আমাকে বলেছে যে আমি কিছু করি নাই। আমাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করো। রাতে খবর পাই আমার স্বামীকে মুরাদনগর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। পরে আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার স্বামী আর বেঁচে নেই। পুলিশ আমার স্বামীকে মেরে ফেলছে।’
জুয়েলের ছেলে শেখ সিহাব বলেন, ‘বিনা অপরাধে পুলিশ আমার বাবাকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলছে। আমার বাবাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যাপারেও পুলিশ আমাদের কিছু জানায়নি। আমরা হাসপাতালে গিয়ে বাবাকে মৃত দেখতে পাই।
জুয়েলের চাচাতো ভাই বিএনপি নেতা শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাই বিএনপির কর্মী। বাঙ্গরাবাজার থানার এসআই আল আমিন তাকে ধরে নিয়ে গেছে খবর পেয়ে রাত সাড়ে আটটায় কল দিয়ে জুয়েলের বিষয়ে জানতে চাই। তখন তিনি আমাকে মুরাদনগর হাসপাতালে আসতে বলে। হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাইকে মৃত অবস্থায় ফেলে রেখেছে।’
মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম মানিক বলেন, রাত ৮টা ৫০ মিনিটে ভিকটিমকে হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত দেখতে পাই। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে মৃত্যুর খবর এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন রাতে বাঙ্গরাবাজার থানার সামনে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
বাঙ্গরাবাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমানকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে মুরাদনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম কামরুজ্জামান বলেন, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৭০পিস ইয়াবাসহ জুয়েল ও তার ৪ সহযোগীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে রাতে থানায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ওই পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, আটক জুয়েলকে পুলিশ নির্যাতন করেনি। অন্য কোনো কারণে তার মৃত্যু হতে পারে। শুক্রবার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।