কোরবানির আগের রাতে পশু কাঁদে। আল্লাহর ফেরেশতারা কোরবানি করতে যাওয়া পশুটিকে জানিয়ে দেন রাত পোহালেই ঈদের দিন সকালেই তাকে জবাই দেওয়া হবে। তাই সে নিজের মৃত্যুশোকে হতভম্ব হয়ে কাঁদতে থাকে। ঠিক এমন কথাই প্রচলিত রয়েছে আমাদের সমাজে। কিন্তু প্রশ্ন হলো সত্যিই কি আগের রাতে কাঁদে কোরবানি করতে যাওয়া পশু? ইসলাম কি বলে এই বিষয়ে?
বিষয়টি নিয়ে জামিয়া কোরানিয়া আরাবিয়া লালবাঘ মাদ্রাসার মুহাদ্দেস মুফতী ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘এমন গল্প আমরাও শুনেছি। তবে এ তথ্যের কোনও ভিত্তি নেই। কোরআন-হাদিসে এ বিষয়ে কোনও তথ্য নেই। এটি আসলে মানুষের মুখে প্রচিলিত গল্প বলা যায়, যার কোনও সত্যতা নেই।’ সুতরাং ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানির আগের রাতে পশু কাঁদার কোন ভিত্তি নেই।
বিষয়টিতে ধর্মীয় কোনও ভিত্তি না থাকলেও বৈজ্ঞানিক কিছু ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রাণিবিজ্ঞান মতে, গরু চোখে জল ফেলতে পারে ধুলা, ঠান্ডা বা চোখের ব্যাধির কারণে এছাড়া গরুরা স্ট্রেস, চাপ ও অস্বস্তি অনুভব করে যা আচরণে প্রকাশ পায়। কোরবানির হাটের ভিড়, নতুন পরিবেশ, একাকীত্ব সব মিলে সে রাতে তারা নির্জীব ও শান্ত হয়ে পড়ে মূলত এসব কারণেই পশুর চোখে জল দেখা যায়।
আর ইসলাম কোরবানিকে চায় আল্লাহর আদেশ পালনের এক নিঃস্বার্থ ত্যাগ হিসেবে। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, “তোমরা কোরবানি করো উত্তমভাবে, ছুরি ধার করো, পশুকে কষ্ট দিও না।” – (সহীহ মুসলিম) তাই কোরবানির পশুর প্রতি সদয় আচরণ, যত্ন ও মানবিক ব্যবহার অবশ্যই জরুরি। সেই আবেগ থেকেই হয়তো আমরা বিশ্বাস করি, তারা কাঁদে। কোরবানির পশুর প্রতি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আলাদা একটা সিম্পাথি কাজ করে। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে যে কোরবানি, তাই মনে হয় ওরা কাঁদছে।
আর কোরবানির আগের রাতে সারাদিনের হইচই শেষে রাতের নিস্তব্ধতায় গরু একা দাঁড়িয়ে থাকে, মাঝে মাঝে গোঙানির মতো আওয়াজ করে, চোখে আলো পড়লে জল টলমল করে ওঠে আর আমরা বলি, “সে কাঁদছে” এটা শুধু গরুর আচরণ নয়, এটা মানুষের ভেতরের অনুভূতির প্রতিফলন।
গরু হয়তো কাঁদে না মানুষের মতো করে, কিন্তু আমাদের চোখে যখন তার চোখের জল পড়ে, আমাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। ত্যাগের এ উৎসব কেবল ধর্মীয় নয়, এটি সহানুভূতিরও শিক্ষা। গরুর চোখে যে জল আমরা দেখি তা হয়তো আমাদের আত্মার একটি আয়না। কোরবানির পশুর প্রতি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের যে আবেগ ভালোবাসা তা যেনো মহান আল্লাহর রাসূল (সা.) এর দেওয়া কোরবানির শিক্ষারই প্রতিফলন।