Saturday, August 23, 2025

প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে রিপোর্টিং, রোগীর গোপনীয়তা কোথায়?

আরও পড়ুন

যদিও বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির দাবি, এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে কঠোর অবস্থানে তারা। অনৈতিক চর্চার কারণে ৩০-৪০ শতাংশ চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে বলে জানান স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। উপহার সংস্কৃতি বন্ধে সুপারিশসহ নীতিমালা জমা দিয়েছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন।

মোবাইলে ধারণ করা ছবিতে দেখা গেছে, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে দেখা মেলে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের। যাদের অন্যতম কাজ রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য থাকা প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলা।

কেউ আবার উপহার হাতে অপেক্ষায় থাকেন চিকিৎসকের চেম্বারে ঢোকার। কখনও সমন্বয়কারীর কাজ করেন চিকিৎসকের পিয়ন।

রোগী ও তাদের স্বজনকে বিরক্ত করে তারা কেন এমন কাজ করেন? এর বৃত্তান্ত জানান পরিচয় দিতে অনিচ্ছুক এক বিক্রয় প্রতিনিধি।

তিনি জানান, চিকিৎসকদের জন্য উপহার সামগ্রী বা বিদেশ ট্যুরের ব্যবস্থা করে থাকে কোম্পানি। বিনিময়ে চিকিৎসকরা ওষুধ লিখে কি-না তার প্রমাণ রাখতে এই কাজ করেন তারা।

আরও পড়ুনঃ  প্রেমিকের ‘ভাই’ হওয়ার প্রস্তাব, যে কাণ্ড করল প্রেমিকা

হরহামেশা চোখে পড়া এমন কর্মকাণ্ডের কারণে প্রেসক্রিপশনে মানহীন ওষুধ লেখা নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

কোনো নীতিমালা না থাকায় এমন কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে দাবি বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কেনান বলেন, ‘হঠাৎ করে চিকিৎসকের চেম্বারে কেউ এমন ঢুকে পড়লে এবং সেটা আমাদের নজরে এলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

ডাক্তারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে ওষুধ বিক্রি বাড়াতে কোম্পানির পক্ষ থেকে দেয়া হয় উপহারের পাশাপাশি নানা অফার। প্রয়োজনের বাড়তিটুকু আবার বিক্রি হয় শহরের বিভিন্ন ব্যস্ত এলাকার মার্কেটগুলোতে।

ডাক্তারের উপঢৌকনের নানা সামগ্রী- ডায়েরি, তৈজসপত্র, চকলেট মিললো রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতের দোকানে। রয়েছে কোম্পানি থেকে দেয়া এসি, ফ্রিজ বিক্রির অফারও। সূত্র বলছে, এসব পণ্য বিক্রির ৬০ শতাংশ টাকা পান ডাক্তার আর ২০ শতাংশ করে পান ম্যানেজার ও বিক্রয় প্রতিনিধি।

আরও পড়ুনঃ  বিয়ে করেননি, শিক্ষার্থীরাই ছিল মাসুকার সন্তান

এসব বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলছেন, তাদের নম্বর ডাক্তারদের কাছে থাকে। ডাক্তাররাই কল দিয়ে বলেন, অনেক কিছু জমে গেছে, এসে নিয়ে যাও।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ বিক্রি বাড়াতে এমন অনৈতিক চর্চায় ৩০-৪০ শতাংশ বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়।

চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলি বলেন, ‘ফার্মেসি থেকে প্রোভাইডার পর্যন্ত যে অশুভ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, এটার প্রভাব কিন্তু আমার দেশের দরিদ্র মানুষের ওপর পড়েছে। তাদের চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে।’

ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির দাবি, প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলাসহ অনৈতিক চর্চার অভিযোগ পেলে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

আরও পড়ুনঃ  গণঅভ্যুত্থানে শিবিরের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করেনি, কিন্তু এটা তাদের একক ইনস্ট্রাকশনে হয়নি

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির সদস্য কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সমিতির নেতারা কিন্তু এ ধরনের কাজ করতে নিষেধ করে দিয়েছে। ছবি তোলার প্রয়োজন নেই, যার মাধ্যমে রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কারো কাছে চলে যাবে, এমনটা আমরা করব না।’

স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের চেয়ার‌ম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, চিকিৎসকের কাছে ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি সরাসরি যেতে পারবে না; এমন সুপারিশসহ নীতিমালা জমা দেয়া হয়েছে।

এই নীতি মালায় আরও আছে কোম্পানির উপহার গ্রহণ নিষিদ্ধ করা, মেডিকেল কনফারেন্সে আয়-ব্যয়ের হিসাব বাধ্যতামূলকসহ নানা সুপারিশ, যা বাস্তবায়ন হলে সুশাসন ফিরে আসবে এই খাতে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ